গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা ২১টি
গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি হয় এমন প্রশ্ন অনেকের মনে আসে। গর্ভাবস্থায় পাকা আম খাওয়া যেমন উপকারিতা তেমনি কাঁচা আম খাওয়াও উপকারী। গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার বেশি কিছু উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে আমে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং বিভিন্ন অর্গানিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে।
যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার ভ্রুনের স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু তাই নয় গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে তা আপনার গর্ভের অনাগত সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনিও অবাক হবেন যে কাঁচা আমের এতো উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই আছেন যে পাকা আম খেতে পছন্দ করেন না তারা চাইলে কাঁচা আম খেতে পারেন। কাঁচা আমের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পেয়ে যাবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা আমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত :
- কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যুক্ত উপাদান।
- নিয়মিত কাঁচা আম খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- কাঁচা আম হার্টের জন্য খুব ভালো।
- ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে কাঁচা আম কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- কাঁচা আম খেলে লিভার ভালো থাকে।
- কাঁচা আম ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা আম খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- চোখ ভালো রাখতে কাঁচা আম খেতে পারেন।
- কাঁচা আম মারি ও দাঁতের জন্য খুব উপকারী।
- নিয়মিত কাঁচা আম খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ কাঁচা আমে রয়েছে অ্যামাইলেস নামক পাচক এনজাইম যা হজমে সহায়তা করে।
- প্রচন্ড গরমে এক গ্লাস কাঁচা আমের শরবত খেলে শরীরের সব ক্লান্তি দূর হবে। কারণ কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।
- ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য কাঁচা আম খুবই উপকারী।
- যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে হার্টি অ্যাটাক কমাতে নিয়মিত কাঁচা আম খেতে পারেন।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে হার্ট অ্যাটাক কমাতে নিয়মিত কাঁচা আম খেতে পারেন।
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়া খুব উপকারী। মা ও শিশুর দুইজনের জন্য উপকারী।
- কাঁচা আম খেলে এই গরমে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কাঁচা আম খাওয়ার অপকারিতা
- অতিরিক্ত কাঁচা আম খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে।
- অতিরিক্ত কাঁচা আম খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
- অতিরিক্ত কাঁচা আম খাওয়ার ফলে গলায় অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কারণ কাঁচা আমে রয়েছে টাইটানিক এসিড, ম্যালিক এসিড, অল্প সাইট্রিক এসিড এজন্য গলায় এমন বোধ হয়।
- বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক দিয়ে কাঁচা আম চাষ করা হয়। যার ফলে অতিরিক্ত খেলে কীটনাশকের সাইড এফেক্ট হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থায় পরিমাণ মতো কাঁচা আম খাওয়া যাবে। তবে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। কাঁচা আমে ভিটামিন বব, ভিটামিন সি এবং ফাইবার থাকে যা গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলর হজমের সমস্যা হতে পারে।
- কাঁচা আম চোখের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- কাঁচা আম কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
তবে অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে বদহজমের সমস্যা হতে পারে। যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে মানে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ তাহলে কাঁচা আম খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যেহেতু কাঁচা আমে এসিডের পরিমাণ বেশি তাই যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় দিনে কয়টি আম খাওয়া যায়
গর্ভাবস্থায় দিনে ১-২ টি মাঝারি আকারের আম খাওয়া যাবে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ আম খাওয়া উচিত নয় কারণ আমে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে যেকোনো খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাই সুষম তালিকা অনুসরণ করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া নিরাপদ তবে পরিমিত পরিমাণ খেতে হবে। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আপনার যদি ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে আম খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কিছু ফল আছে যা এড়িয়ে চলা উচিত বা কম করে খেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে কাঁচা পেপে, আনারস, বেশি পরিমাণ আঙুর, তেঁতুল ও খেজুর। কিছু ফল যেমন লিচু এবং হিমায়িত বা ক্যানজাত ফল সাবধানে খাওয়া উচিত। চলুন গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবে না তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
কাঁচা পেঁপে : গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া উচিত নয়।এতে এমন উপাদান রয়েছে যা জরায়ুকে সংকুচিত করতে পারে। ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
আনারস : আনারসে ব্রোমেলিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা জরায়ুর মুখ নরম করে দিতে পারে। যার ফলে সময়ের আগে প্রসব বেদনা শুরু হতে পারে। তাই আনারস খাওয়া উচিত হবে না।
বেশি পাকা আঙুর : অতিরিক্ত পাকা আঙুর খেলে মোমসদের মধ্যে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তেঁতুল : তেঁতুলে থাকা ট্যানিক এসিড কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। যা মাও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
খেজুর : অতিরিক্ত পরিমাণ খেজুর খেলে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
লিচু : কিছু ক্ষেত্রে লিচু খাওয়া যাবে না। কারণ লিচুতে কিছু উপাদান রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
হিমায়িত ও ক্যানজাত ফল : গর্ভাবস্থায় হিমায়িত বা ক্যানজাত ফল খাওয়ার সময় সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এগুলোতে অনেক সময় প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া খুবই প্রযোজনীয়। আপেল, কলা, কমলা, পেয়ারা, আম বেদানা ইত্যাদি ফল গর্ভাবস্থায় খাওয়া ভালো। তবে যেকোনো ফল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায তরমুজ খাওয়া যাবে। পরিমাণ মতো গর্ভবতী মায়েদের জন্য ২০০-৩০০ গ্রাম তরমুজ খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত তরমুজ খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থার জন্য তরমুজ খাওয়া ভালো তাই সম্ভব হলে তরমুজের বীজ বাদ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া ভালো। টাটকা তরমুজ কেটে সাথে সাথে খাওয়া উচিত। খাবারের পরপরই না খেয়ে কালি পেটে বা কাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর তরমুজ খাওয়া ভালো। রাসায়নিক মুক্ত তরমুজ বেছে নিন বর্তমানে অনেক তরমুজে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল। যার মধ্যে আমরা আলোচনা করেছি গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়া যাবে, গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া, গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়া নিরাপদ কি না, গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আমাদের আলোচনা ছাড়া অতিরিক্ত কোনো প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আমাদের কমেন্টের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url