আমরুল শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা 2025
আমরুল শাখের উপকারিতা
আমরুল শাকের স্বাদ কিছুটা টক ধরনের হয়। এটি অনেকের কাছেই অনেক প্রিয়। এছাড়া এই শাক ভেষজ গুণাগুণ সম্পন্ন হওয়ায় মানুষকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে৷ পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এখন আমরা আমরুল শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব :
শিশুদের সর্দি ভালো করে : আমরুল শাক শিশুদের সর্দি ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি কোন সর্দি বুকে বসে যায় এবং ঘন ঘন কাশি হয় তবর আমরুল পাতার রস খাওয়ানো যেতে পারে। তবে তার সর্দি কাশি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
এছাড়াও এর পাশাপাশি সরিষার তেলের মধ্যে আমরুল পাতার রস মিশিয়ে তা উষ্ণ গরম করে বুকে ও পিঠে মালিশ করলে ভালো উপকরণ পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন এক দিনে অধিক পরিমান আমরুল পাতার রস সেবন না করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : বর্তমানে মানুষের যে সাধারণ সমস্যাগুলো রয়েছে তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ একটি। অধিকাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে গেলে ঘাড়ে ব্যথা হওয়া থেকে শুরু করে মাথা ঘুরানোসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সাথে আমরুল পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হবে।
দাঁত ও মাড়ি শক্তিশালী করে : আমাদের অনেকেরই দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ে এবং মাড়ি ফুলে যায়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমরুল পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আপনি নিয়মিত আমরুল পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
এরজন্য আপনাকে আমরুল পাতা ভালোভাবে পেস্ট করে নিয়ে এতে লবণ ও হলুদ মিশিয়ে দাঁত ও মাড়িতে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া যাদের মুখের দুগন্ধ হয় তারা নিয়মিত এই পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে করে মুখের দুগন্ধ দূর হবে।
ভিটামিন সব এর অভাব পূরণ : আমরুল শাক টক স্বাদযুক্ত হওয়ার কারণে এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান। নিয়মিত আমরুল শাক খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়।
অম্ল সমস্যা সমাধান : আমাদের মধ্যে অনেকেই টক খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু টক খাওয়ার সাথে সাথে তাদের গ্যাসের সমস্যা হয়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আপনি নিয়মিত আমরুল পাতার রস কেতে পারেন। এটি আপনাকে অম্ল সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।
লিভার সুস্থ রাখে : লিভার সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে আমরুল পাতা ওষুধের মতো কাজ করে। তাই যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত চার থেকে পাঁচটি আমরুল পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন এই পাতা খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরকে ডিটক্সিফাই করে ফলে লিভার সুস্থ থাকে।
মাইগ্রেশানের সমস্যা দূর করে : মাইগ্রেন এমন একটা সমস্যা যা বংশ পরম্পরায় একজন থেকে অন্য জনের হয়ে থাকে। এই রোগ একেবারে ভালো হয় না। তবে এই রোগ বিভিন্ন ভাবে দমিয়ে রাখা যায়। যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত আমরুল পাতার রস ও পিয়াজের রস সমপরিমাণ নিয়ে কপালে ভালোমতো ম্যাসাজ করতে পারেন।
চুলকানি ও ফোঁড়া নিরাময় : আমাদের অনেকরই নানা কারণে চুলকানি ও ফোঁড়া হয়ে থাকে। এই চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরুল পাতার রস গায়ে লাগাতে পারেন। এই রস গায়ে মাখলে চুলকানি ভালো হয়। সেই সাথে যদি কারো ফোঁড়ার যন্ত্রণা হয় তবে সে আমরুল পাতার পেস্ট তৈরি করে ফোঁড়ায় লাগাতে পারেন।
মূত্রগ্রহ রোগ নিরাময় : আমাদের অনেকেরই প্রসাবের বেগ হয় কিন্তু প্রসাব হয় না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরুল পাতা খুবই উপকারী। নিয়মিত এই পাতার দুই চামচ রস হাফ কাপ পানিতে মিশে দৈনিক চারবার খেলে এরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শ্বাসকষ্ট নিরময় : আমাদের অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন বিকেলে এক কাপ আমরুল পাতার রস খেতে হবে। এভাবে সাত দিন খেলে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাছাড়া আমরুল শাক মুখের রুচি বাড়াতে, পেট পরিষ্কার করতে, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি আগাছা হলেও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই আমাদের এটি খাওয়ার প্রতি ডত্নবান হতে হবে।
আমরুল শাকের ছবি
আমরুল একটি ছোট সরু লতানো উদ্ভিদ। এটি সাধারণত আম অর্থাৎ আমাশয় রোগকে রুকে দেয় বা প্রতিহত করে বলে এই শাখের নাম আমরুক ছিল। পরে এটি পরিবর্তন হয়ে আমরুল নামকরণ করা হয়েছে। এটি সাধারণত স্যাতস্যাতে পরিবেশে ভালো জন্মায়।
বিশেষ করে বর্ষাকালে এটি বেশি দেখা গেলেও সারা বছর এই শাক পাওয়া যায়। আমরুল শাখ দেখতে অনেকটা শুশুনি শাকের মতো। পার্থক্য হলো শুশনি শাকের চারটি পাতা থাকে কিন্তু আমরুল শাকের তিনটি পাতা থাকে।
আমরুল শাকের প্রায় ২০০ টি প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে হলুদ ও গোলাপি ফুলের আমরুল শাক বেশি দেখা যায়। আমরুল শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর রয়েছে ওষুধি গুণাগুণ।
আমরুল শাকের ভেষজ গুণ
আমরুল শাক আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি শাক। কিন্তু এদেশের গ্রাম বাংলার মানুষ একে আগাছা হিসেবে বেশি চিনে। বাংলাদেশের সব জায়গায় কম বেশি এই শাক দেখা যায়।
আমরুল শাক সাধারণত টক স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। একারণে এই শাক অনেকেই পছন্দ করে আবার অনেকে এর টক স্বাদের জন্য খেতে পছন্দ করে না। তবে এই শাক পুষ্টিগুণে ভরপুর। টক স্বাদযুক্ত হওয়ার কারণে এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে।
আমরুল শাকে রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এটি বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পৃথিবীর সব রোগের মহৌষধ বলা হয় আমরুল পাতাকে। টক স্বাদযুক্ত লতানো উদ্ভিদটি শরীরে এমন কিছু উপকার বয়ে আনে যা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না।
আমরুল ফলের ছবি
আমরুল ফল দেখতে অনেকটা জবের মতো। আমরুল এর প্রতিটি ফলের মধ্যে অনেকগুলো বিষ থাকে। এই পাতার রয়েছে নানা ধরনের ওষুধি গুণাগুণ। মুধে রুটি আনে, পেটের সমস্যা দূর করে, সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
ওষুধি গুণাগুণ ছাড়া এই পাতার রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ যেমন : ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম ইত্যাদি।
আমরুল শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল। যারা মধ্যে আমরুল শাক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব আমরুল পাতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
আমরুল পাতার বৈশিষ্ট্য
আমরুল পাতা শাক হিসেবে বহু পরিচিত। সরু লতানো আকৃতির এই উদ্ভব। আমরুল শাকের একসঙ্গে তিনটি পাতা জোড় বেঁধে থাকে। পাতার প্রতিটি অংশ হৃদপিণ্ডাকৃতির হয়। কান্ড ও পাতা সবুজ হয়৷ কান্ড এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়।
পাতা ও কান্ড নরম রসালো প্রকৃতির হযে থাকে। সাধারণ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে ফুল ফোটে। ডাটার গোড়া থেকে গজানো লম্বা দন্ডের মাথায় ছোট ছোট হলুদ রঙের ফুল ফোটে। ফুলের পাপড়ি পাঁচটি করে হয়।
আমরুল বৈজ্ঞানিক নাম
আমরুল শাক Oxalidaceae পরিবারভূক্ত গুল্মজাতীয় এক ধরনের লতানো উদ্ভিদ। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। চুকা শাক, টক পাতা, চ্যাংদোলা, চুকত্তিপাতিসহ নানা নামে পরিচিত আমরুল শাক।
আমরুল শাক এর ইংরেজি নাম Creeping woodsorrel
বৈজ্ঞানিক নাম : Oxalis corniculata
আমরুল শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল। যারা মধ্যে আমরুল শাক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব আমরুল গাছ সম্পর্কে।
আমরুল গাছ
আমরুলের আদিনিবাস দক্ষিণ-আমেরিকা। তবে ভারত উপমহাদেশে এই উদ্ভিদ হাজার বছর আগেও ছিল৷ এর প্রমাণ বেদ ও চরক সংহিতায় পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে গ্রামের বাড়ির আনাচে কানাচে বিশেষ করে ঠান্ডা মাটিতে জন্মাতে দেখা যায়।
আমরুলের রয়েছে নানা ওষুধগুণ। জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, পেট পরিষ্কার, মুখের রুচি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এর পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম।
আমরুল শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল। যারা মধ্যে আমরুল শাক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
অনেক ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে৷ আর তার মধ্যে থানকুনি পাতা হলো একটি। থানকুনি পাতা শেকর থেকে পাতা সমস্তটা খাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা :
- থানকুনি পাতায় আছে প্রচুর ভিটামিন সি তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- থানকুনি পাতা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এক চিমটি লবণ দিয়ে এই পাতা সিদ্ধ করে নিয়মিত পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
- মুখের ব্রণ দূর করে। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
- মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষতে উপকরী। থানকুনি পাতাতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়া। যা আমাদের মূত্রনালী ও পেটের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।
- সর্দির জন্য উপকারী। প্রতিদিন সকালে এটি পাকা কলার সাথে কেলে পেটের স্বাস্থ্য ও লিভার ভালো থাকে।
- পেটের অসুখে থানকুনি ব্যবহার আছে। থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে খুসখুসে কাশি এবং শ্বাসকষ্ট দূর হবে। তাছাড়া তুলসী ও গোলমরিচ দিয়ে থানকুনি পাতার রস খেলে ঠান্ডা নিরাময় হবে।
- আমাশয়ে ভালো কাজ করে। থানকুনি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- সাময়িকভাবে কাশি কমাতে সাহায্য করে।
- গলা ব্যাথার জন্য উপকারী।
- যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url